মোঃ আতিকুর রহমান, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন জেলার সকল হেভিওয়েট নেতারা। এই আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকসহ রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক।
বিশ্বম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী এলাকায় বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭৮৬ জন। স্বাধীনতা পরবর্তী সংসদ নির্বাচনগুলোতে এই আসনে একটি উপ-নির্বাচনসহ
মাত্র তিনবার আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছিলো। অন্য নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ হয় হেরেছে, না হয় শরীক দলকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছে। গেল দুই মেয়াদেও জাতীয় পার্টিকে এই আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি না থাকায় জেলার অন্য আসনগুলোর চেয়ে এখানে দুর্বল অবস্থানে আওয়ামী লীগ।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি জেলা পরিষদের দুইবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. শামছুন নাহার বেগম শাহানা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি সানজিদা নাসরিন দীনা (ডায়না) ।
জেলার সকল গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতারা এই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী হওয়ায় দলের সকল নেতা কর্মীদের নজর এখন এই আসনটির দিকে। কে হচ্ছেন এই আসনে ‘নৌকার মাঝি'? এই আলোচনা এখন চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কর্মীদের সকল আড্ডায়। এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের জয় হবে বলে মনে করেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা।
মনোনয়ন প্রত্যাশী ড. মোহাম্মদ সাদিক পিএসসি’র ১৩তম চেয়ারম্যান এবং নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বয়স ৬৫ পূর্ণ হওয়ায় অবসরে যান সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা।তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নজরুল ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। শিল্প মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভিন্ন ভিন্ন পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সুইডেনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব এবং কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি জানান, আমি চাই আওয়ামী লীগ জয়ী হোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। মনোনয়ন যেই পাক, নৌকার জয় হোক।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং এই আসনের সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মতিউর রহমান জানান, দীর্ঘদিন এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের এমপি না থাকায় এ বছর প্রার্থী অনেক বেশি। বেশি প্রার্থী হওয়ায় আমি অনেক খুশি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সবকিছুই জানেন। আশা করছি তিনি সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাক্তি। দলীয় নেতা-কর্মীসহ সকলের কাছেই তিনি প্রিয়। প্রায় ২০ বছর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পর পর দুইবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের তিনবারের সভাপতি এবং এফবিসিআইয়ের পরিচালক ছিলেন এই রাজনীতিক। তিনি জানান, মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হোক, ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করবে।
ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগের কর্মী। তাঁর বাবা ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মা ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ইমন প্রায় সাত বছর
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি জানান, ২০১৪ সালে আমি এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলাম। কিন্তু মহাজোটের সাথে আসন ভাগাভাগির কারণে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছাড়তে হয়েছে। আশা করছি দলীয় সভানেত্রী ও কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড বিবেচনা করবেন।
নোমান বখত পলিন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তাঁর ভাই প্রয়াত আয়ুব বখত জগলুল ছিলেন সুনামগঞ্জের দুইবারের নির্বাচিত মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি জানান, দীর্ঘদিন এই আসনটিতে দলীয় এমপি না থাকায় নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে পড়েছে। তাই জেলা সদরে দলকে শক্তিশালী করতে একজন দলীয় এমপির প্রয়োজন। দল যাকেই মনোনয়ন দিবে আমরা সবাই তার পক্ষে কাজ করে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করবো।
খায়রুল হুদা চপল জেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক। তিনি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি, এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান সহসভাপতি। চপল জানান, মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হবে, সকলে মিলে তাকে বিজয়ী করতে হবে।
অ্যাড. শামছুন নাহার বেগম শাহানা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। তিনি জানান, দল যাকেই মনোনয়ন দিবে তার সাথেই থাকবো সবাই।নৌকার বাইরে যাবার সুযোগ নেই।